ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি যেন চাঁদাবাজির ঘাট!

কক্সবাজারের (চকরিয়া) প্রতিনিধি ::
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ার চিরিংগা  হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি এখন চাঁদাবাজির ঘাটে পরিণত হয়েছে। যানবাহনের কাগজপত্র যাছাই, অবৈধ পার্কিং ও চলাচলসহ নানা কারণে টাকা আদায় করছে ফাঁড়ি পুলিশ। এতে গাড়ির মালিক-চালক, মোটরযান ব্যবসায়ী সবার ত্রাহি অবস্থা। পুলিশের বেপরোয়া চাদাবাজিকে কেন্দ্র করে পুলিশ-শ্রমিক-মালিক পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের আশঙকা করছে সচেতন মহল।
জানা গেছে, মহা-সড়কে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে চকরিয়া-চিরিংগা ষ্টেশন-বানিয়ারছরা ঢালা-চকরিয়া কলেজ গেইট-বরইতলী রাস্তার মাথা-আজিজনগরস্থ জাইল্লারঢালা সহ বিশাল এলাকা দেখভাল করছেন চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশ। অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর, সার্জেন্ট ও কনষ্টেবল মহা-সড়কের বানিয়ারছরা ঢালায় দিনের পৃথক সময়ে চেকপোস্ট বসান। সেখানেই দূরপাল্লার বাস ছাড়া আন্তঃসড়কে চলাচল করা মাইক্রোবাস, কার, জিপ, ডাম্পার, ট্রাক, মিনিট্রাক, সিএনজি, মোটর সাইকেল, টমটমসহ সব ধরনের যানবাহন আটকিয়ে নানা অজুহাতে টাকা আদায় করা হয়। কাগজপত্র ঠিক থাকলেও তাদের নির্ধারিত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই জরিমানা কিংবা মামলার খড়গ নামছে মালিক-চালক সবার কপালে। বিশেষ করে মাসের মাঝামাঝি ও শেষ সময়ে এ মাত্রা তীব্র হলেও দৈনন্দিন ঘটে বলে ঘোর অভিযোগ। এমনকি হাসপাতালে  চিকিৎসার জন্য এম্বুলেন্সযোগে রোগীবাহী গাড়ি ও রেহাই পায় না চাঁদাবাজির হাত থেকে। এধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে।  কিছু প্রকাশ পাচ্ছে কিছু নীরবেই রয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সুতোয় যানবাহন আটকিয়ে হাজার হাজার টাকা আদায় করে হাইওয়ে পুলিশ। শুধু তারা নয়, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে মাসের শেষে অসংখ্য যনবাহনকে বিভিন্নভাবে জরিমানা করে লাখ লাখ টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।
চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা ষ্টেশন থেকে চকরিয়া-পেকুয়া-মগনামা আভ্যন্তরীণ সড়ক গুলোতে চলাচলকারী সিএনজি চালকরা জানিয়েছেন, উপ-পরিদর্শক সেলিম আলম ভ্যান নিয়ে মহাসড়ক ও আভ্যন্তরিণ সড়ক থেকে সিএনজি ও টমটম গাড়ি আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। পরে চালকদেরকে সন্ধ্যার দিকে দেখা করতে বলে। চালকরা ফাঁড়িতে গেলে প্রতিটি গাড়ি ৫-৭ হাজার টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়। যারা যোগাযোগ করেনা তাদের গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা জুড়ে দেয়া হয়। এভাবে আটক বাণিজ্যের নামে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশ সড়কে চলাচলরত সিএনজি, টমটম গাড়ি থেকে টোকেনের মাধ্যমে মাসিক ভিত্তিতে মাসোহারা আদায় করেন। প্রতিমাসে একটি গাড়িকে ৫শত টাকা হারে টোকেন মানি দিতে হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগী চালকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ফাঁড়িতে সব ধরণের কার্যক্রম চলে আইসির নির্দেশে। তাছাড়া আইসির নিজস্ব তিনজন পাবলিক লোক (সোর্স) থাকে ব্যারাকে। তারা মেচে খায় মেজে ঘুমায়, তাদের দিয়ে চলে টেকনিক অবলম্বনে চলে সবকিছু । মূলত নিজস্ব ইনভেস্ট করে পাবলিক সোর্সের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে আদান প্রদান করে থাকে। তাদের সংবাদের ভিত্ততে ইয়াবার বড় বড় চালান আটক করলেও প্রকাশ পায় নামেমাত্র। চলতি বছর চিরিংগা ফাঁড়িতে যোগদানের পর থেকে এ নিয়মটি অব্যাহত। তার এ কর্মকাণ্ডে পুরো হাইওয়ে পুলিশ প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলে দাবি ভূক্তভোগীদের।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা মতে, ত্রিহুইলার সিএনজি, টমটম মহাসড়কে চালানো নিষেধ। কিন্তু কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় আসতে গেলে অবশ্যই মহাসড়ক মাড়াতে হয়। এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ।
পটিয়ার পর চকরিয়া নলবিলা ফরেষ্ট বিটকাম চেক ষ্টেশনে পাশে ছাড়া মাঝখানের বিশাল এলাকায় কোথাও সিএনজি স্টেশন নেই। রাত ১২টা থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত গ্যাস নিতে সিএনজিগুলো মাহাসড়কে আসতে পারবে এমন নির্দেশনা থাকলেও সে সময়েও গ্যাস নিয়ে ফেরা গাড়িগুলোও হয়রানি থেকে বাদ যাচ্ছে না। নির্দিষ্ট গ্যারেজে চার্জিং করে উপ-সড়কগুলোতে যেতে গিয়ে হাইওয়ে পুলিশের ব্যারিকেডে পড়ছে টমটম। এসব টমটম আটকিয়ে টাকা আদায় এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে এখানে।
ভূক্তভোগীদের অভিযোগ,কিছু কনস্টেবল, সার্জেন্ট গাড়িপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে বখরা আদায় করে আসছেন। অনেক সময় গ্যারেজ থেকেও টমটম নিয়ে এসে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ।
অপর একটি সূত্র জানায়, মামলা কিংবা জরিমানায় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করা হলেও বিপরীতে স্লিপ দিয়ে সরকারি রাজস্ব আদায় দেখানো হয় ২’শ থেকে ৫’শ টাকা। এরপরও যানবাহন সংশ্লিষ্টদের কোনো উচ্চবাচ্য করার সুযোগ থাকে না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চিরিংগা হাইওয়ে ফাড়ির ইনর্চাজ(ইন্সপেক্টর) মোঃ নুরে আলম বলেন, যত মামলা কিংবা জরিমানা আদায় হয়েছে তার বিপরীতে স্লিপ দেয়া আছে। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়টি সঠিক নয় দাবি করে হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ করেন।

পাঠকের মতামত: